নিজস্ব প্রতিবেদক
এ জেলায় যোগ দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন হারুন অর রশীদ। তার ভয়ে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছিলো। পাড়ার পাতি মাস্তান থেকে জেলার শীর্ষ গুন্ডাও তখন চুপসে গিয়েছিলো। প্রভাবশালী প্রভাব দেখাতে গিয়েও পিছু হটেছে বার বার। পদোন্নতি হয়ে এডিশনাল ডিআইজি হলেও নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখনও তাকে ‘এসপি হারুন’ নামেই চেনেন। গতকাল তিনি এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী মায়ের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে দেওভোগে চুনকা কুটিরে যান তিনি।
২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন হারুন অর রশীদ। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অপরাধ জগতের হোমরাচোমড়ারা থমকে যায়। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুয়াড়ি, ভূমিদস্যুদের কোনরকম ছাড় না দিয়ে একের পর এক জালে ধরা শুরু করে পুলিশ। শহরের হকারদের পেছনে প্রভাবশালীরা থাকলেও ফুটপাতকে হকার মুক্ত করা হয়। মীর জুমলা রোডের অবৈধ দোকানপাট সরে চলাচল করে রিকশাসহ যানবাহন। জেলার বিভিন্ন জুয়ার আস্তানায় হানা দিয়ে পুলিশ জুয়া পরিচালনাকারিদের আটক করে। এরমধ্যে প্রভাবশালী অনেকেও রয়েছে। পাগলায় মেরী এন্ডারসনে বারে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক উদ্ধার ও এর সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে পুলিশ। এরমধ্যে একজন প্রভাবশালী সাংসদের শ্যালকের নামও রয়েছে। মাদকসহ গ্রেপ্তার হয় নাসিকের এক কাউন্সিলর। মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ আর হিসেব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমান এক কাউন্সিলরের আটকের বিষয়টি ছিলো বেশ আলোচিত। চাঁদাবাজির অভিযোগে শহরের এক শিল্পপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার নামে ফতুল্লা থানায় জিডি করেন সে সময়ের ওসি। আল্লামা ইকবাল রোডে এক সাবেক এমপি পুত্রের দখলে থাকা একটি ফ্ল্যাট আসল মালিকের কাছ থেকে কিনে নিতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকজন ভূমিদস্যুর হাত থেকে অনেকের সম্পত্তি উদ্ধার করে দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের একাদিক নাগরিক নেতার মতে, এসপি হারুনের সময়কাল এ অঞ্চল সন্ত্রাস মুক্ত ছিলো। প্রভাবশালী এক সাংসদের অনুগতরাও তখন চুপসে গিয়েছিলো। অযথা কেউ তখন ঘর থেকে বের হতো না, যারা ঢাকায় থাকে তারা বিনা কারনে নারায়ণগঞ্জে আসতো না। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর তাকে এখান থেকে ঢাকায় বদলী করা হয়।
গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ৩ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার দেওভোগের বাড়িতে যান হারুন। চুনকার স্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর মা মমতাজ বেগমের সমবেদনা জানান। এ সময়ে তিনি মেয়র আইভীকে বলেন, আমি ১৫ দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে ছিলাম তাই প্রথমে আপনার মায়ের মৃত্যুর খবর শুনিনি।
এসময় আলী আহাম্মদ চুনকার বড় ছেলে জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলী রেজা রিপন, ছোট ছেলে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জল ও মেয়ের জামাতা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদিরও ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ্ আলম, সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন সবুজ, দৈনিক সংবাদচর্চা’র সম্পাদক মো. মুন্না খাঁন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ, সাবেক পিপি আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হায়দার আলী পুতুল সহ অনেকে।